সর্বশেষ

বিএনপির তিন বছরের কমিটিতে ছয় বছর পার'

/ সর্বশেষ সম্মেলন ২০১৬ সালের মার্চে, আগামী সম্মেলন কবে কেউ জানে না /

প্রকাশ :


২৪খবরবিডি: 'তিন বছরের কমিটি দিয়ে ছয় বছর পার করেছে বিএনপি। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সর্বশেষ কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর পর কাউন্সিল করার বিধান রয়েছে। ছয় বছর পার করলেও কাউন্সিল নিয়ে দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা নেই। দায়িত্বশীলরা বলছেন, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কাউন্সিল নিয়ে ভাবনা নেই তাদের।'
 

নির্বাচন ঘিরে তারা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ব্যস্ত। এ ছাড়া দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে। দলের শীর্ষ এ দুই নেতার অনুপস্থিতিতে কাউন্সিল করা হলে তা নেতা-কর্মীরা ভালোভাবে নেবে না। এ অবস্থায় বিএনপির সম্মেলন কবে হবে কেউ জানে না। জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'কীসের সম্মেলন। বিএনপির ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। ঘরে বসে সভা করলেও পুলিশ সংস্থা হানা দেয়। বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষোভ করলে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই মুহূর্তে আমাদের কাউন্সিল জরুরি বিষয় নয়। জরুরি বিষয় হচ্ছে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠা করা। আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা।' -জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বেশ কয়েক দফা জাতীয় কাউন্সিল করার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত আর তা করার চেষ্টা করেনি বিএনপি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে তিন বছর পর পর জাতীয় কাউন্সিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিএনপির গঠনতন্ত্রেও তিন বছর পর পর জাতীয় কাউন্সিল করার কথা উল্লেখ রয়েছে। সে হিসাবে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করার কথা। কিন্তু আরপিও এবং দলের গঠনতন্ত্রকে আমলে নিচ্ছে না বিএনপি। যদিও দলের একটি অংশ জাতীয় কাউন্সিল করার জন্য বরাবরই চাপ দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু লন্ডন প্রবাসী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা না পাওয়ায় যতবারই কাউন্সিলের চেষ্টা হয়েছে ততবারই এ পথ থেকে পিছিয়ে এসেছেন দলের সিনিয়র নেতারা।


-জানা যায়, বর্তমানে বিএনপির তৃণমূল পুনর্গঠন চলছে। শেষ মুহূর্তে কাউন্সিল করা সম্ভব না হলে জাতীয় স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটির ফাঁকা পদগুলো পূরণ করা হতে পারে। যথাসময়ে কাউন্সিল না হওয়ায় দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা বেড়েছে। দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালনের পরও তারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন না। পদ-পদবি না পেয়ে অনেকে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর বিএনপিতে কাউন্সিল হয়েছে ছয়বার। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের কিছু দিন পর স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হলেও বেশ কয়েকটি পদ ফাঁকা ছিল। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে নির্বাহী কমিটির একাধিক নেতার মৃত্যু হয়। কয়েকজন পদত্যাগ করেছেন। পদোন্নতি দিয়ে কয়েকটি পদ পূরণ করা হলেও বেশির ভাগ পদই ফাঁকা। স্থায়ী কমিটিও চলছে খুঁড়িয়ে। ২০১৯ সালের জুনে সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটির শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়া হলেও এখনো কয়েক পদ শূন্য রয়েছে।

'এ ছাড়া নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, আবদুল মান্নান, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, বিচারপতি টি এইচ খান মারা গেছেন। ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান ও মোসাদ্দেক আলী ফালু পদত্যাগ করেছেন। আর ইনাম আহমেদ চৌধুরী দল ত্যাগ করে যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগে। সব মিলিয়ে ৩৭ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে ১০টি পদই ফাঁকা। এ ছাড়া ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে। দলটির নেতারা জানান, সারা দেশের সাংগঠনিক জেলা কমিটি পুনর্গঠন করে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করতে বারবার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তৃণমূলের কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বেশ কয়েকটি জেলার আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করা হয়।

'বিএনপির  তিন  বছরের  কমিটিতে  ছয়  বছর  পার'

কিন্তু করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় থমকে যায় পুনর্গঠন। করোনার কারণে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রাখা হয়। গত বছরের শেষ দিকে সীমিত পরিসরে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ফের শুরু করে বিএনপি। এরপর কয়েকটি জেলার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এর আগে যেসব জেলার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয় সেগুলোর মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। দলের ৮২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৫৬টির কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। বাকিগুলো দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তৃণমূল পুনর্গঠন শেষ হলে কাউন্সিল নিয়ে আলোচনা হতে পারে।'

-এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যেনতেনভাবে দলের কাউন্সিল করা সম্ভব নয়। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও কাউন্সিল করতে কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে তা করা সম্ভব হয়নি। আমরা তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছি। দ্রুত সময়ে এ কাজ শেষ করা হবে। এরপর দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করে কাউন্সিলের বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কাউন্সিল অবশ্যই হবে।

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত